গোঁফ ক্লিন সেভ করা হারাম?
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে একটা চেহারা এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে, ধার্মিক মুসলমান বলতে অনেকের মাথায় প্রথম যে ছবি আসে, সেটা হলম্বা দাড়ি আর ক্লিন শেভ গোঁফ। রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে টিভি তাবলিগ, মসজিদের মিম্বার থেকে সোশ্যাল মিডিয়া – সর্বত্র এই লুকই যেন ইসলামি পরিচয়ের একমাত্র স্ট্যান্ডার্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমনকি দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও গোঁফ একদম সাফ করে রাখেন।কিন্তু প্রশ্ন হলো – এটা কি আসলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ? নাকি আমরা নিজেরাই একটা নতুন ফ্যাশন বানিয়ে ফেলেছি আর সেটাকেই ধর্ম মনে করে বসে আছি?

সহীহ হাদীসে বলেছেন, সহীহ বুখারী (হা/৫৮৯২) ও সহীহ মুসলিম (হা/২৫৯)-এ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্পষ্ট নির্দেশ – মুশরিকদের বিরোধিতা করো, গোঁফ ছোট করো এবং দাড়ি লম্বা করে ছেড়ে দাও।
আরবি: خالفوا المشركين، أحفوا الشوارب وأعفوا اللحى”
এখানে ব্যবহৃত শব্দ – د “أحفوا الشوارب” (আহফুস শাওয়ারিব)। “হাফ” শব্দের অর্থ ছোট করা বা কাটা, পুরোপুরি তুলে ফেলা নয়। হাদীসে কোথাও “احلقوا الشوارب” (গোঁফ শেভ করো) বলা হয়নি।
ইবনে উমার রা.-এর আমল ছিল, তিনি গোঁফ এতটাই ছোট রাখতেন যেন ঠোঁটের উপরের লাল অংশ দেখা যায়, কিন্তু একদম শেভ করতেন না। (বুখারী, আদাবুল মুফরাদ)
অধিকাংশ ফকীহ ও মুহাদ্দিসের মত, হানাফি, মালেকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি, চার মাযহাবেরই প্রখ্যাত আলেমরা গোঁফ পুরো শেভ করাকে মাকরূহ তাহরীমি বলেছেন, কেউ কেউ হারাম পর্যন্ত বলেছেন।
ইমাম নববী, ইবনে হাজার আসকালানি, আল্লামা শাওকানি, শাইখ উসাইমীন, শাইখ আলবানি রহ.-সবাই বলেছেন, গোঁফ ছোট করা সুন্নাত, শেভ করা নয়।

তাহলে এই ক্লিন শেভ কালচার কোথা থেকে এলো? গোঁফ ক্লিন সেভ করা হারাম?
অনেকের ধারণা, এটা মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে দেওবন্দি-তাবলিগি পরিবেশে জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু দেওবন্দের বড় বড় আলেমদের যেমন মাওলানা আশরাফ আলি থানভি, মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানি রহ ছবি দেখলেও দেখা যায়, তাঁদের গোঁফ ছিল, শেভ করা ছিল না। পরবর্তী প্রজন্মে কেন জানি পুরো শেভ করার একটা ট্রেন্ড চালু করে দিয়েছে।
রাজনীতির খেলা:
বর্তমানে যারা ইসলামি রাজনীতি করেন বা ধর্মীয় বক্তা হিসেবে জনপ্রিয় হতে চান, তাদের অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে এই লুক নেন – কারণ জনগণের মনে এটাই , ধার্মিক চেহারা হিসেবে গেঁথে গেছে।
অথচ মিজানুর রহমান আজহারি, শাইখ আহমাদুল্লাহ, শাইখ মতিউর রহমান মাদানির মতো অনেক জনপ্রিয় বক্তাই গোঁফ ছোট রাখেন, শেভ করেন না।
যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই ঠিকমতো আদায় করেন না, তাদের জন্য দাড়ি-গোঁফ নিয়ে এত মাতামাতি করার দরকার নেই। আর যারা সত্যিকারের সুন্নাহর পথে চলতে চান, তাদের জন্য রাসূল সা.-এর নির্দেশ স্পষ্ট:
দাড়ি লম্বা করে ছেড়ে দিন, গোঁফ ছোট করুন কিন্তু পুরো শেভ করবেন না। এটুকু যদি আমরা মানতে পারি, তবেই আসলে আমাদের চেহারায় সুন্নাহর ছাপ পড়বে। নইলে শুধু একটা ধর্মীয় ফ্যাশন করে নিজেদের আর জনগণকে ধোঁকা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না।

ইউটিউব ভিডিও তে যেমন ভাবে বলা হয়েছে : সাথে এখানে ক্লিক করে ভিডিও টি দেখতে পারেন।
আজ এমন একটি কথা বলব যা অনেক মুসলমানই জানেন না – আর অনেকে বিশ্বাসই করবেন না।
কিন্তু ইসলামের স্বার্থেই আমাদের বলতে হবে।
তাই কোনো উল্টাপাল্টা কমেন্ট করার আগে – অনুগ্রহ করে পুরোটা শুনুন। না হলে ভুল বুঝে যাবেন, আর সত্যটা মিস করবেন।
বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে ধর্মীয় পরিচয়, বাহ্যিক লেবাস এবং সুন্নাহ পালন নিয়ে অনেকের অনেক রকম মতামত। বিশেষ করে পুরুষদের গোঁফ ও দাড়ি সম্পর্কিত বিষয়ে। অনেকে মনে করেন, মুসলমানদের গোঁফ সম্পুর্ণ সেভ করে রাখা ভালো। এজন্য বর্তমানে রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে যারাই ধর্মীয় লেভাস ধরতে চাই, তারা গোফ সেভ করে রাখে।
এবিষয়টি সমাজে এমনভাবে প্রচলিত হয়ে গেছে যে, মুসলিম মানেই দাড়ি বড় ও গোফ সেভ করা চেহারা মাথায় আসে। এমনকি মুসলমানদের লোগো ব্যবহার করা হলেও গোফ সেভ, দাড়ি বড় এমন একটি অবয়ায়ক দেখানো হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামিক রাজনৈতিক দলের নেতা পর্যন্ত গোফ ক্লিন সেভ করে রেখেছেন।
এসব দেখে আমাদের মাথায় মুসলিম মানেই গোফ সেভ করা থাকবে এমন একটি ধারণা চলে এসেছে। কিন্তু আসলে কি তাই। আসলেই কি মুসলমানদের গোঁফ সেভ করে রাখা উচিত? এবিষয়ে কোরআন হাদিস কি বলে?
আমরা একটু কোরআন হাদিসে এ বিষয়ে খোঁজাখুজি করে পেয়েছি অবাক করা তথ্য। হাদিসে কোথায় গোঁফ সেভ করতে বলা হয়নি। এমনকি আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স) কোনদিন গোফ সেভ করেননি। continue on You Tube







