মুসলিম ফল ব্যবসায়ীর বীরত্বে বাঁচল অনেক প্রাণ
মুসলিম ফল ব্যবসায়ীর বীরত্বে বাঁচল অনেক প্রাণ
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ অস্ট্রেলিয়া | UMK News
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডি বিচে রবিবার সন্ধ্যায় এক হানুকা উদযাপন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে অসংখ্য পরিবারের হাসির ঠাট্টায় মুখরিত হয়ে উঠে সমুদ্রতীর। কিন্তু মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে সেই আনন্দের মেলা পরিণত হয়েছে রক্তের নদীতে।
দুজন সশস্ত্র আক্রমণকারীর গুলিতে কমপক্ষে ১০ জন নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়েছে। এই হামলাকে পুলিশ ইহুদি-বিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে চিহ্নিত করেছে, যা অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর একটি।
কিন্তু এই অন্ধকার ঘটনার মাঝে উদ্ভাসিত হয়েছে এক অসাধারণ বীরত্বের আলো। তিনি ৪৩ বছরের মুসলিম ফল ব্যবসায়ী আহমাদ আল আহমাদ। অস্ত্রহীন হাতে তিনি একজন গুলিবাজের বন্ধুক ছিনিয়ে নেন। যাতে তিনি নিজের শরীরে দুটি গুলি খান।
সূর্যাস্তের সোনালি আলোয় সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল গান-সংগীত এবং আইসক্রিমের লাইন। হঠাৎই গুলির আওয়াজ ভেদ করে দিল সেই শান্তি। দুজন আক্রমণকারী।

যাদের একজনকে পরিচয় হয়েছে পাকিস্তানি নাগরিক নাভিদ আকরাম হিসেবে। তিনি রাইফেল এবং শটগান নিয়ে হামলা চালায়। পুলিশের তথ্য অনুসারে, একজন আক্রমণকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এবং অন্যজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তাদের গাড়িতে বিস্ফোরক ডিভাইস পাওয়া গেছে, যা হামলার পরিকল্পনাকে আরও ভয়াবহ করে তোলে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন চ্যাবাদের নেতা রাব্বি এলি শ্ল্যাঙ্গারসহ অনেক শিশু এবং পরিবারের সদস্য।
এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে যখন সবাই পালাতে শুরু করেছে, তখন আহমাদ আল আহমাদের মতো একজন সাধারণ মানুষের অসাধারণ সাহস চোখ কাড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে ওঠা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কীভাবে তিনি পিছন থেকে একজন গুলিবাজের দিকে ছুটে গিয়ে তাকে ধাক্কা দেন এবং অস্ত্র ছিনিয়ে নেন।
এই মুহূর্তটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের, কিন্তু এতে হামলার তীব্রতা অনেকটা কমে যায়। আহমাদের চাচাতো ভাই মুস্তফা মিডিয়াকে বলেন, আহমাদের কোনো অস্ত্রের অভিজ্ঞতা নেই। তিনি সাধারণত সাধারণ জীবন যাপন করেন, দুই ছেলের বাবা। সাধারণত বন্ডি বিচের কাছে হাঁটতে যান, কিন্তু আজ তার সেই হাঁটা বদলে দিয়েছে ইতিহাস।
আহমাদ সাধারণত সাউথারল্যান্ডের একটি ফলের দোকান চালান, যেখানে তিনি আরব – অস্ট্রেলিয়ান সম্প্রদায়ের একজন পরিচিত মুখ। হামলার পর তাকে দুটি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
এই বীরত্বের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়া উথলে ওঠে। একজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, যদি আহমাদ না থাকতেন, তাহলে হামলার মাত্রা আরও ভয়াবহ হতো। তিনি লেবানিজ-অস্ট্রেলিয়ান, কিন্তু আজ তিনি সবার হিরো।আরেক পোস্টে বলা হয়েছে, এটি শুধু একজন মানুষের সাহস নয়, এটি মানবতার জয়।

ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতারা আহমাদকে ‘আমাদের রক্ষক’ বলে সম্বোধন করেছেন, যা এই হামলার মতো ঘটনায় বিদ্বেষের পরিবর্তে ঐক্যের বার্তা দেয়। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বলেন, “এটি আমাদের দেশের বিরুদ্ধে একটি আঘাত, কিন্তু আহমাদের মতো মানুষ আমাদের আশা জাগিয়ে রাখে। আমরা এই সন্ত্রাসের মূলে পৌঁছব।
এবিষয়ে পুলিশের তদন্ত চলছে। নাভিদ আকরামের বোনিরিগের বাড়িতে ছাপা মারা হয়েছে, এবং তার সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার যোগসূত্র সন্দেহ করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ায় বাড়তে থাকা ইসলামোফোবিয়া এবং অ্যান্টিসেমিটিজমের মধ্যে এই ঘটনা একটি কঠিন স্মারক। আহমাদের কাজ দেখিয়ে দিয়েছে যে, ধর্ম বা জাতির সীমানা অতিক্রম করে মানবতা কীভাবে জয়ী হয়
এই রক্তাক্ত দিনের শেষে বন্ডি বিচের বালুকাময় তীরে ফুলের তোড়া জড়ো হয়েছে নিহতদের স্মৃতিতে। কিন্তু আহমাদের গল্পটি বলছে, অন্ধকারের মধ্যেও আলোর রেখা থাকে। যদি আমরা সাহস দেখাতে প্রস্তুত থাকি। তদন্তের নতুন তথ্য আসতে পারে, কিন্তু আজকের এই বীরত্ব অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে অমলিন হয়ে থাকবে।





